বুধবার ৮ জানুয়ারী ২০২৫ - ১৪:০৭
ভারত ও ইরানের যৌথ ঐতিহ্য

হাওজা / মীরজা ফজলুল্লাহ খান হোসেইনি নাসিরুদ্দিন শাহ কাদেজারের নির্দেশে, ভারত উপমহাদেশে ছড়িয়ে পড়া ইরানিদের অবস্থা পরিদর্শন ও তদন্তের জন্য ব্যাপক সফরে বের হন।

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, মীরজা ফজলুল্লাহ খান হোসেইনি, ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দে (১২৯১ হিজরি সন) নাসিরুদ্দিন শাহ কাদেজারের নির্দেশে, ভারত উপমহাদেশে ছড়িয়ে পড়া ইরানিদের অবস্থা পরিদর্শন ও তদন্তের জন্য ব্যাপক সফরে বের হন। এই সফরের উদ্দেশ্য ছিল ভারতীয় উপমহাদেশে বসবাসকারী ইরানিদের জীবনযাত্রার সাথে পরিচিত হওয়া এবং বিভিন্ন সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করা।

তিনি ভারতের বিভিন্ন শহর, যেমন কাশ্মীর এবং বার্মা (বর্তমান মিয়ানমার) সফর করেন এবং যে ভ্রমণপত্রটি তিনি রচনা করেছেন, তাতে তার পর্যবেক্ষণের একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রদান করেন। কিছু ইতিহাসবিদ তাকে সাদাত হোসেইনি আমুলি ও শেইখুল ইসলাম কাজভিনির পরিবারের সদস্য হিসেবে উল্লেখ করেছেন, তবে কিছু ইতিহাসবিদ তার বংশ পরিচয় আলাদা মনে করেছেন। তবে গবেষণার পর জানা যায় যে মীরজা ফজলুল্লাহ খান হোসেইনি কাজভিনির শেইখুল ইসলাম বংশের সদস্য ছিলেন এবং তার বাবা মীরজা মুহাম্মদ হোসেইন, যিনি আজদুল মুলক কাজভিনি নামে পরিচিত, তিনি ছিলেন ইরানের রাশিয়ায় মন্ত্রীর দায়িত্বে নিযুক্ত। তার বাবা দুইবার আস্তানা কুদস রেজভি’র মুতওয়াল্লি ছিলেন এবং একধরণের মর্যাদাপূর্ণ পদে নিযুক্ত ছিলেন।

ফজলুল্লাহ খান তার ভ্রমণপত্রে বিভিন্ন অঞ্চলের রাজনৈতিক ও ভূগোলগত পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করেছেন, বিশেষভাবে তিনি ইরানিদের অবস্থা এবং ভারতীয় উপমহাদেশে বসবাসকারী শিয়া মুসলমানদের সম্পর্কে বিশদভাবে মন্তব্য করেছেন। তিনি স্থানীয় মানুষের জীবনযাত্রার বিশ্লেষণ করেছেন, যেমন কৃষি কার্যক্রম, ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান ইত্যাদি, এবং তাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি পরিষ্কার ছবি তুলে ধরেছেন। এটি শুধুমাত্র একটি সাধারণ ভ্রমণবৃত্তান্ত ছিল না, বরং এটি একটি মূল্যবান ঐতিহাসিক এবং সামাজিক উৎস হিসেবে পরিচিত।

ফজলুল্লাহ খান তার ভ্রমণপত্রে তার মিশনের উদ্দেশ্য উল্লেখ করেছেন, যেখানে তিনি বলেন যে তাকে ভারতীয় উপমহাদেশে বসবাসকারী ইরানিদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করার জন্য পাঠানো হয়েছিল। তিনি ভারতে বিভিন্ন শহর, যেমন পাটিয়ালা, বেনারস, হুগলি ও কলকাতা সফর করেন এবং সেখানে ইরানিদের সমস্যার সমাধান করার জন্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি বলেন, আগে ভারতীয় উপমহাদেশে ইরানিদের সংখ্যা ও অবস্থার সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাওয়া যেত না, এবং তার সফরের মাধ্যমে সেসব তথ্য সংগ্রহ করতে সক্ষম হন।

ফজলুল্লাহ খান কাশ্মীরের সংস্কৃতি, মানুষের আচার-অনুষ্ঠান এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বর্ণনা করেছেন। তিনি কাশ্মীরের উষ্ণ আবহাওয়া, সবুজ পরিবেশ, ঝর্ণা এবং পাহাড়ের সৌন্দর্য সম্পর্কে বিস্তৃতভাবে লিখেছেন, যা কেবল কাশ্মীরের সৌন্দর্যকেই ফুটিয়ে তোলে না, বরং তার নিজের অঙ্গীকার এবং রুচিবোধকেও প্রকাশ করে।

এছাড়াও, ফজলুল্লাহ খান তার ভ্রমণপত্রে ভারতের রাজনৈতিক পরিস্থিতির বিশ্লেষণ করেছেন, যা তিনি নাসিরুদ্দিন শাহকে পাঠিয়েছিলেন। এই প্রতিবেদনগুলো ভারতের সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির গভীর বিশ্লেষণ প্রদান করে এবং ইতিহাসবিদ ও গবেষকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে কাজ করতে পারে। পরবর্তীকালে, তার ভ্রমণপত্রের শেষে তিনি একটি বইয়ের অনুবাদ করেছেন, যা ভারতের ভূগোল, রাজনৈতিক এবং সামাজিক অবস্থা নিয়ে লেখা হয়েছিল এবং এটি প্রিন্স অব ওয়েলস (যিনি পরে রাজা সপ্তম এডওয়ার্ড নামে পরিচিত হন) এর জন্য লেখা হয়েছিল।

এই বইটি ছিল বিশেষভাবে সজ্জিত এবং বিভিন্ন চিত্র সহ ভারতে মুদ্রিত। মীরজা ফজলুল্লাহ খান তার মিশন শেষে এই বইটি নাসিরুদ্দিন শাহকে উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন, এবং শাহ তার নামের প্রথম পাতায় নিজের হাতে লিখেছিলেন "সিয়াহতনামা মীরজা ফজলুল্লাহ, কনসাল মুম্বাই, ভারত"।

সূত্র: ইরান ও ভারতের যৌথ ঐতিহ্য

মাইক্রোফিল্ম নূর আন্তর্জাতিক কেন্দ্র

রিপোর্ট: মজিদুল ইসলাম শাহ

Tags

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha